মৃত্যু—মানব জীবনের চিরন্তন সত্য। আর মৃত্যুর পর মুসলিম সমাজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জানাজা ও দাফনের বিধান যথাযথভাবে পালন করা। কিন্তু অনেকেই জানেন না, দাফনের পর কবরের পাশে কিছুটা সময় অবস্থান করে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ। এই বিষয়ে সহীহ হাদিস ও সাহাবায়ে কেরামের আমল আমাদেরকে একটি স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেয়।
কবরের পাশে অবস্থান করার সুন্নাহ
উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) বলেন,
“রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন কোনো মাইয়্যেতকে দাফন করতেন, তখন তিনি কিছুক্ষণ কবরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতেন এবং বলতেন: ‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার জন্য দৃঢ়তার দোয়া কর। কেননা এখন সে জিজ্ঞাসিত হবে।’” 📘 (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৩২১৩)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, দাফনের পর কিছু সময় মৃত ব্যক্তির পাশে দাঁড়িয়ে তার জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করা সুন্নাতসম্মত। এতে মৃতের জন্য রহমত প্রার্থনা হয় এবং তার প্রশ্নোত্তরের সময়ে সাহায্যের প্রার্থনা করা হয়।
সাহাবায়ে কেরামের ওসিয়ত
এই বিষয়ে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত রেখেছেন বিখ্যাত সাহাবী আমর ইবনুল আস (রাঃ)। মৃত্যুশয্যায় তিনি তার পরিবারকে বলেন:
“আমার মৃত্যুর পর যখন তোমরা আমাকে দাফন করবে, তখন আমার কবরের পাশে এমন সময় অবস্থান করবে যতটুকু সময় একটি উট জবাই করে তার গোশত কাটাকুটি ও বণ্টন করতে লাগে। যেন এই সময় তোমরা দোয়া ও ইস্তিগফার করো, যাতে আমার নিঃসঙ্গতা দূর হয় এবং আমি ফেরেশতাদের প্রশ্নের জবাব দিতে পারি।” 📘 (সহিহ মুসলিম, ১/৭৬)
এটি একটি প্রাঞ্জল ও গভীর নির্দেশনা—যেখানে তিনি শুধু দাফনের পর দোয়া করতে বলেননি, বরং কবরের পাশে নির্দিষ্ট সময় অবস্থান করার কথা বলেছেন। “উট জবাই করে গোশত বণ্টনের সময়কাল” একটি উপমা যা দ্বারা বোঝানো হয় প্রায় ১৫–৩০ মিনিট পর্যন্ত সময়। এই সময়ে তিলাওয়াত, ইস্তিগফার এবং দোয়া করা উত্তম।
ফিকহগ্রন্থের দৃষ্টিভঙ্গি
এ আমলের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন ইসলামী ফিকহবিদরাও। 📚 আদ্দুররুল মুখতার (২/২৩৭), ফাতাওয়া হিন্দিয়া (১/১৬৬), ফাতহুল মুলহিম (১/২৭৩) প্রভৃতি গ্রন্থে দাফনের পর কবরের পাশে কিছুটা সময় অবস্থান করার গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে।
উপসংহার
দাফনের পর কবরের পাশে কিছুটা সময় অবস্থান করে মৃতের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করা একটি সুন্দর ও প্রশংসনীয় সুন্নাত। এটি মৃত ব্যক্তির জন্য সহানুভূতি, ভালোবাসা এবং সহায়তার প্রতীক। কবরের প্রথম মুহূর্তেই যখন সে নিঃসঙ্গ, তখন তার আপনজনদের তিলাওয়াত, দোয়া ও ইস্তিগফার হতে পারে তার জন্য মহান সাহায্য।
আসুন, আমরা এই সুন্নাতকে জীবিত রাখি এবং আমাদের আপনজনদের দাফনের সময় এই গুরুত্বপূর্ণ আমলটি পালন করি।