একটি নিস্তব্ধ রাত, চারদিকে নীরবতা, প্রকৃতি যেন ঘুমিয়ে গেছে। এমন গভীর মুহূর্তে আপনি উঠে দাঁড়ালেন। দাঁড়ালেন সেই সত্তার সামনে, যিনি আপনার হৃদয়ের অবস্থাও জানেন। হ্যাঁ, তাহাজ্জুদের কথা বলছি—একটি এমন নামাজ, যা মৃতপ্রায় হৃদয়কে সতেজ করে তোলে, প্রাণহীন আত্মাকে জীবন্ত করে তোলে।
তাহাজ্জুদ শুধু একটি নামাজ নয়; এটি স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে এক গভীর ভালোবাসা, যত্ন ও অনুভবের সেতুবন্ধন। এটি এমন এক ইবাদত, যা আপনাকে আল্লাহর নৈকট্যে নিয়ে যায়—অদৃশ্য বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে। আমরা আমাদের চোখে আল্লাহকে দেখি না, কিন্তু আমাদের প্রতিটি সিজদা, কান্না ও দোয়ার মুহূর্তে তিনি আমাদের দেখছেন, শুনছেন এবং জানছেন আমরা কী চাই।
তাহাজ্জুদের প্রতি উৎসাহ জোগাতে আল-কুরআনে বহু আয়াত রয়েছে। আল্লাহ বলেন—
“তারা শয্যা ত্যাগ করে তাদের প্রতিপালককে ডাকে আশা ও ভয় নিয়ে। আর আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে।”
(সূরা সিজদাহ, আয়াত ১৬)
এই আয়াত শুধু তাহাজ্জুদের মর্যাদা প্রকাশ করছে না; এটি আমাদের প্রেরণা জোগাচ্ছে আল্লাহর পথে গভীরভাবে আত্মসমর্পণ করতে। এমনকি হেরা গুহায় নবিজির কাছে জিবরাইল (আ.) দ্বিতীয়বার আসেন তাহাজ্জুদের আদেশ নিয়ে। এটি ইবাদতের এক উঁচু স্তর, যাকে কোনো ফরজ নামাজ ছাড়া অন্য নফল ইবাদত ছুঁতে পারে না।
রসূল (সা.) বলেন—
“তোমরা অবশ্যই রাতের ইবাদত করবে। কেননা এটা তোমাদের পূর্ববর্তী সৎকর্মশীলদের অভ্যাস। এটি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উপায়, গুনাহ মোচনের মাধ্যম এবং পাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার ঢাল।”
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন—
“যে ব্যক্তি রাতের বেলায় সিজদারত বা দাঁড়ানো থাকে, পরকালের ভয় করে ও তার রবের অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে—সে কি তার সমান, যে এগুলো করে না? বলুন, যারা জানে আর যারা জানে না—তারা কি সমান? বস্তুত, কেবল জ্ঞানীরাই উপদেশ গ্রহণ করে।”
(সূরা যুমার, আয়াত ৯)
প্রতিটি রাতের শেষ ভাগে মহান রব নিজেই ডেকে বলেন—
“কে আছো? ওঠো। ক্ষমা চাও, আমি ক্ষমা করবো।”
এ যেন রব ও বান্দার একান্ত কথোপকথনের মুহূর্ত। এই মুহূর্তে আপনি কাঁদেন, বলেন, চেয়ে নেন আপনার জীবনের সব প্রয়োজনীয় চাওয়া-পাওয়া। এই দোয়া, এই কান্না, এই নির্জনতা—সবকিছু মিলে তাহাজ্জুদকে করে তোলে একটি অতুলনীয় অভিজ্ঞতা।
তাহলে আর দেরি কেন? আসুন, আজ রাত থেকেই আমরা এই অভ্যাস গড়ে তুলি। প্রতিদিন একটু একটু করে এই অভ্যাস তৈরি হোক—রবের দিকে ফিরে যাওয়ার, তার সান্নিধ্যে হারিয়ে যাওয়ার, এবং সেই অপার্থিব শান্তি অনুভব করার।